কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খাতের মধ্যে একটি হলো রেমিটেন্স খাত। রেমিটেন্স কি সহজে বলতে গেলে অন্য দেশে যখন প্রবাসীরা কাজ করে নিজের দেশে টাকা পাঠায় তখন তাকে রেমিটেন্স বলে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী হাতিয়ার হল রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের গত ১০ বছরে রেমিট্যান্স খাতে অভাবনীয় উন্নতি করেছে।
বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এদেশের অর্থনীতির জন্য রেমিটেন্সের গুরুত্ব খুবই অপরিসীম। রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমরা এই আর্টিকেলে আজ বিস্তারিতভাবে রেমিটেন্স সম্পর্কে জানব এবং রেমিটেন্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থানসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
রেমিটেন্স অর্থ কি এবং কাকে বলে?
রেমিটেন্স অর্থ হলো টাকা প্রেরণ করা। দেশের বাইরে যারা অর্থ উপার্জন করে নিজের দেশে সেই অর্থগুলো পাঠায় সেগুলোকেই রেমিটেন্স বলে। সহজ হয় বলতে গেলে, বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে নিজের দেশে পাঠানো। রেমিট্যান্স একটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য দেশের সার্বিক উন্নতির সাথে রেমিটেন্সের একটি ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে। রেমিটেন্স একটি দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির জন্য সবথেকে কার্যকরী উপায়।
বর্তমানে যে দেশগুলো বেশি উন্নতি করতেছে তাদের বেশিরভাগ অংশ আসে রেমিটেন্স সেক্টর থেকে। বর্তমানে দেশের বাইরে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশে অনেক ফ্রিল্যান্সাররা ঘরে বসেই হাজার হাজার ডলার দেশের জন্য নিয়ে আসতেছে। দিনে দিনে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ অদূরে উচ্চ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যেতেও পারে। একটি দেশের রেমিট্যান্সের উপর ভিত্তি করে অনেক বড় বড় কোম্পানি দেশকে বিভিন্ন প্রকার লোন দেয় এবং বিনিয়োগ ও করে। বাংলাদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধাদের অবদান সত্যি প্রশংসনীয়।
রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৩
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবথেকে বেশি রেমিট্যান্স আদায়কারীর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পজিশনে রয়েছে ভারত, চীন, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মিশর, পাকিস্তান, ফ্রান্স, বাংলাদেশ, জার্মানি, নাইজেরিয়া।
রেমিট্যান্স অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অষ্টম তম। এই পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের পূর্বে আরো সাতটি দেশ অবস্থান করতেছে। যার মধ্যে ভারত সবার শীর্ষে অবস্থান করতেছে। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশের থেকে রেমিটেন্স অর্জনে এগিয়ে রয়েছে যথাক্রমে ভারত এবং পাকিস্তান। বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে রেমিটেন্স। যা দেশের মোট জিডিপির তিন ভাগের এক ভাগ ধরা হয়ে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশে দিনে দিনে রেমিটেন্স অর্জনের অর্থনৈতিক হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং অর্থনীতি শহর জাতীয় সেক্টর গুলোতে রেমিটেন্সের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাণশক্তি হচ্ছে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশের রেমিটেন্স আদায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর। বর্তমানে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ ঘরে বসেই মাসে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করতেছেন। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। Payoneer এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২২ সালে দুই বিলিয়ন ডলারের উপরে রেমিটেন্স এসেছে শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে।
রেমিট্যান্স আয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের বাইরে কর্মরত। যারা দেশে তাদের উপার্জিত অর্থ প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রায় ২৪.৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। যা বাংলাদেশকে অন্যতম রেমিটেন্স প্রাপক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাংলাদেশের রেমিটেন্স সেক্টরে মূলত অবৈধ চ্যানেল গুলোর আধিপত্য বেশি রয়েছে, মাত্র ১০% রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈধ পথে আসে। যেমন ব্যাংক এবং মানি ট্রান্সফার অপারেটর গুলোর মাধ্যমে। এখনো বৈধ পথ গুলোর ওপর আস্থা অভাব, উচ্চ ফি এবং বৈধ চ্যালেন গুলোর সাথে দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ এজন্য বেশিরভাগ জনই অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠায়।
বৈধ পথে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্প্রীতিক বছরগুলোতে নানা ধরনের পরিষেবা চালু করেছে। যার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা এবং প্রণোদনার সুযোগ। এবং সরকার বৈধ পথ গুলোর জন্য ফি কমানো এবং বিভিন্ন প্রকার সুবিধা সহ দক্ষতা এবং এক্সেস যোগ্যতা উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
সবশেষে বলতে গেলে রেমিটেন্স খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সবথেকে সহায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কিন্তু বৈধ পথে রেমিটেন্স আসলে আরো বেশি উপকার করবে বাংলাদেশের জনগণ।
Related Post
- ফ্রিল্যান্সিং এ বাংলাদেশের অবস্থান
- ফ্রিল্যান্সিং এ আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান কততম
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ
গত কয়েক বছরের রেমিট্যান্স এর পরিমাণ
বছর | রেমিট্যান্স এর পরিমাণ (in USD billion) | % of GDP |
---|---|---|
2020 | 24.8 | 6.5% |
2019 | 27.5 | 7.1% |
2018 | 15.5 | 4.9% |
2017 | 13.6 | 4.4% |
2016 | 14.9 | 4.8% |
2015 | 15.3 | 5.2% |
বাংলাদেশের রেমিটেন্স সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান
- বিশ্ব ব্যাংকের মতে ২০ সালে বাংলাদেশে মোট ২৪.৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮.৬ % হ্রাস পেয়েছে যার অন্যতম একটি কারণ হলো করোনা ভাইরাস।
- বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৬.৫% রেমিট্যান্স।
- বেশিরভাগ রেমিট্যান্স পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে (বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত), পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়া থেকে।
- বাংলাদেশে গড় রেমিট্যান্স ট্রান্সফার প্রায় $200-$250।
- বৈধ রেমিট্যান্স চ্যানেল (যেমন ব্যাংক এবং মানি ট্রান্সফার অপারেটর) বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় 10%, যার বেশিরভাগই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে (যেমন হুন্ডি এবং অন্যান্য অবৈধ নেটওয়ার্ক) পাঠানো হয়।
প্রবাসী আয়ে শীর্ষ দেশ ২০২৩
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে এখানে সেরা ১০টি দেশ রয়েছে:
- ভারত
- চীন
- মেক্সিকো
- ফিলিপাইন
- মিশর
- পাকিস্তান
- ফ্রান্স
- বাংলাদেশ
- জার্মানি
- নাইজেরিয়া
নোট: এই পরিসংখ্যানগুলি বিশ্বব্যাংকের তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে এবং সংশোধন সাপেক্ষে।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবাসী আয় gdp এর কত শতাংশ?
বাংলাদেশে বর্তমানে জিডিপি প্রায় 6.5 শতাংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের থেকে। বাংলাদেশের দিনে দিনে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে আগের বছরের তুলনায় বর্তমানে রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মোট জিডিপির একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
FAQs
প্রবাসী রেমিট্যান্স আয়ে শীর্ষ দেশ কোনটি
প্রবাসীদের বর্তমান রেমিটেন্স এর উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবথেকে বেশি আয় দেশ হলো ভারত। ভারত গত বছর প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রেমিটেন্স এসেছে।
প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কত
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ সালে রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়া এর মধ্যে তৃতীয়। বাংলাদেশের পূর্বে রয়েছে যথাক্রমে ভারত এবং পাকিস্তান।
রেমিট্যান্স আহরণে সরকার কত শতাংশ প্রণোদনা দেয়?
বাংলাদেশে বিদেশি প্রবাসীদের রেমিটেন্স আহরণে বাংলাদেশ সরকার প্রায় 2.5% আরও ঘোষণা দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে।
Related Post